সংবিধান কাকে বলে? বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

সংবিধান কাকে বলে? বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

সংবিধান কাকে বলে?

সংবিধান হলো একটি রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। যে সকল নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাকে সংবিধান বলে। একটি দেশের সরকার কীভাবে গঠিত হবে, আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কীভাবে পরিচালিত হবে, এদের ক্ষমতা কী হবে, জনগন এবং সরকরের সম্পর্ক কে‘মন হবে-এ‘সব বি‘ষয় সংবিধানে উল্লেখ থাকে। তাই সংবিধান‘কে রাষ্ট্রের চা‘লিকা শক্তি বলা হয়।

সংবিধান বিষয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল বলেন, সংবিধান হ‘লো এমন এক জীবন পদ্ধ‘তি যা রাষ্ট্র স্বয়ং বেছে নিয়েছে।

সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি

সংবিধান প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি‘গুলো নিচে আলো‘চনা করা হলো-

  • অনুমোদনের মাধ্যমে: দেশের জনগণকে সকল ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অতীতে প্রায় রাষ্ট্রেই স্বেচ্ছাচারী শা‘সকগণ নিজের ইচ্ছা‘নুযায়ী রাষ্ট্র পরিচা‘লনা করত। এর ফলে দেশের জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দেশের জন‘গণকে শান্ত করার জন্য এবং তাদের অধিকা‘রকে স্বীকৃতি দেওয়া‘র জন্য একপর্যায়ে শাসক সংবিধান প্রণয়ন ক‘রেন। যেমন- ১২১৫ সা‘লে ইংল্যা‘ন্ডের রাজা জন ‘ম্যাগনাকার্টা’ নামে অধি‘কার সনদ স্বাক্ষ‘রে বাধ্য হয়েছেন।  এটি ব্রিটিশ সংবিধা‘নের এক উল্লেখযো‘গ্য স্থান দখল করে আছে।

আরও পড়ুন:

আইন কাকে বলে? আইনের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উৎস কী?

স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতা কত প্রকার ও কী কী?

  • আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে : সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গ‘ঠিত গণ‘পরিষদের সদ‘স্যদের আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন হতে পারে।  যেমন: আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান‘ও আলাপ-আলো‘চনার মাধ্যমে গণ‘পরিষদ কর্তৃ‘ক প্রণীত হয়।

 

  • বিপ্লবের দ্বারা: শাসক যখন স্বৈরাচার শাসক‘কে পরি‘ণত হয়, তখন বিপ্লবের দ্বারা স্বৈরাচারী শাসকের পত‘ন ঘটি‘য়ে নতুন শাস‘কগোষ্ঠী শাস‘ন ক্ষম‘তা গ্রহণ করে‘ এবং নতুন সংবিধান তৈরি করে। যেমন: রাশিয়া, কিউবা, চীনের সংবিধান এ পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে।

 


  • ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে : বিবর্তনের মাধ্যমেও সংবিধান প্রণয়ন হতে পারে।  যেমন- ব্রিটেনের সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

 

বাংলাদেশের সংবিধান

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধান তৈ‘রির জন্য ৩৪ সদস্য‘বিশিষ্ট খ‘সড়া সংবি‘ধান প্রণয়ন ক‘মিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। পরে ১৯৭২ সালের ১৭ এপ্রিল খসড়া কমিটি প্রথম অধিবেশন বসে।

গঠিত কমিটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলা‘দেশের খসড়া সংবি‘ধান তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে তা গণ‘পরিষদে উত্থাপিত হয় । ১৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত গণ‘পরিষদে সংবিধা‘নের খসড়া পাঠ করা হয়। গণপরিষ‘দে বিভিন্ন সদস্যে‘র পক্ষে-বিপক্ষে মতা‘মত দানের পর অব‘শেষে পরিমার্জি‘ত হয়ে এই সংবিধান ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সালে গণ‘পরিষদ কর্তৃ‘ক গৃহী‘ত হয় এবং ১৬ ডিসে‘ম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্য‘কর হয় ।

আরও পড়ুন:

পরিবার কাকে বলে? পরিবারের শ্রেণিবিভাগ 

যৌথ পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধা

সুশাসন বলতে কি বুঝায়?

বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশ সংবিধানের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।  নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-

  • লিখিত দলিল: বাংলাদেশের সংবিধান একটি লি‘খিত দলি‘ল। এই সংবিধানের ১৫৩টি অনুচ্ছেদ, একটি প্রস্তাবনাসহ সাতটি তফসিল রয়েছে। এটি ১১টি ভাগে বিভক্ত ।

 

  • দুষ্পরিবর্তনীয় : বাংলাদে‘শের সং‘বিধান দুষ্পরিবর্তনীয়।  এই সংবিধানের কোন নিয়ম পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হলে জাতীয় সংস‘দের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্ম‘তির প্রয়োজন হয়।

 


  • রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি রয়েছে।  সেগুলো হলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব মূলনীতির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরি‘চালনা করে।

 

  • মৌলিক অধিকার: সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। একজন নাগরিক কী কী অধিকার ভোগ করতে পারবে তা সংবিধানে উল্লেখ্য রয়েছে।  যেমন- জীবনধারণের অধি‘কার, বাকস্বা‘ধীনতার অধিকার, চলা‘ফেরার অধি‘কার, ধর্মচর্চার অধিকার,সম্পত্তি লাভের অধিকার ইত্যাদি।

 

  • সর্বজনীন ভোটাধিকার : বাংলাদেশের সংবিধানে সর্ব‘জনীন ভোটাধি‘কার প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পেশা ইত্যাদি নির্বিশেষে দেশের ১৮ বছর বয়সের যে কোন নাগরিক ভোটাধিকার লাভের অধিকার রয়েছে।

 

  • প্রজাতান্ত্রিক : সংবিধান অনু‘যায়ী বাংলাদেশ এক‘টি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সকল ক্ষমতার উ ৎস  হচ্ছে জনগণ ।

 

  • সংসদীয় সরকার : বাংলাদেশের সংবি‘ধানে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার‘ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় । দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রি‘সভার হা‘তে শাসন‘কার্য পরিচাল‘নার ভার অর্পণ করা হয়। এ সরকা‘র ব্যব‘স্থায় মন্ত্রিপরিষদ তার কা‘জের জ‘ন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে।

 

  • এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র : বাংলাদেশ একটি এক‘কেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেই। জাতীয় পর্যায়ে একটি‘মাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে সমগ্র দেশ পরিচালিত হয়।

 


  • আইনসভা: বাংলাদেশের আইনসভা এ‘ক কক্ষবিশিষ্ট। বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ । এটি দেশের সার্বভৌম আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। বর্তমানে জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর।

 

  • সর্বোচ্চ আইন : বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রে‘র সর্বো‘চ্চ আইন। বাংলাদেশের সংবিধা‘নের সঙ্গে দেশের প্রচ‘লিত কোনো‘ আইনের সং‘ঘাত সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান প্রা‘ধান্য পাবে। অর্থাৎ যদি কোনো আই‘ন সংবিধানের সাথে সামঞ্জ‘স্যহীন হয়, তাহলে ঐ আই‘নের যতখানি অসাম‘ঞ্জস্যপূর্ণ ততো‘খানি বাতিল হয়ে যাবে।

 

  • বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বাংলাদেশের সংবিধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের বিধান রয়েছে।

####

এই পোস্ট থেকে আমরা সংবিধান কাকে বলে? বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলাম। পোস্টটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button